jewelheron2@gmail.com

Wednesday, May 1, 2013

একটি মজাদার আদর্শ হিন্দি সিরিয়াল তৈরির রেসিপি

5:35 AM

Share it Please
সিরিয়াল তৈরির উপকরণ:
১।একটা নায়িকা: নায়িকা চরিত্রের জন্য হাবাগোবা বা নিতান্ত সহজ সরল চেহারার নারীরা অধিক প্রাধান্য পাবে। একশ ঘা খেয়েও যে হাসিমুখে থাকতে পারবে, সেই আসল নায়িকা।

২।একটা নায়ক: নায়ক চরিত্রের জন্য বিশেষ কোন যোগ্যতার দরকার নেই। ২৫/৩০ বছর বয়স্ক পুরুষ হলেই হবে। অভিনয় দক্ষতা না থাকলেও চলবে। সিরিয়ালে পুরুষদের পুতুল সাজিয়ে রাখার নিয়ম।

৩।দুই জোড়া বয়স্ক অভিনেতা অভিনেত্রী (মা বাবা ও শ্বশুর শাশুড়ি চরিত্রের জন্য)।

৪।নায়িকার শ্বশুর বাড়িতে সঙ্কট তৈরির জন্য ইচ্ছামত ননদ, জা রাখা যেতে পারে।
পারিবারিক অশান্তি তৈরি ও নির্মূলের জন্য এরা খুবই কার্যকর।

৫।একটা ডুপ্লেক্স বাড়িঃ নায়কদের বাড়ি অবশ্যই ডুপ্লেক্স হতে হবে। এক্ষেত্রে রান্নাঘর, ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুমের দিকে বেশি নজর দিতে হবে।
এছাড়া কাহিনীর জন্য অবশ্যই নায়ক নায়িকাদের মোটামুটি অবস্থাসম্পন্ন ঘরের হতে হবে। নায়কদের যে কোন বিজনেস থাকবে, প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার লাভ লোকসান হতে হবে। মনে রাখবেন, লাভ হলেও ১০০, লস হলেও ১০০।

এই উপকরণগুলো নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন, পরিমাণ মত সঙ্কট বা ঝামেলা মেশান, তৈরি হয়ে গেল মজাদার একটি হিন্দি সিরিয়াল। বছরের পর বছর পাবলিককে খাওয়ানো যাবে। নষ্ট হওয়ার কোন উপায় নেই।
কীভাবে মিশ্রণ তৈরি করবেন? এটাও বলে দিতে হবে? আচ্ছা একটা নমুনা বলে দিচ্ছি। এই পথে আগালে ১০০% সফলতার সম্ভাবনা।

(কাহিনী)
শুরু করুন এইভাবে, সবচেয়ে সহজ উপায়ে, শুরুতে নায়িকা কলেজ ছাত্রী থাকবে। নায়িকা ভাল ছাত্রী, পরীক্ষা হোক না হোক, ফার্স্ট সেকেন্ড হয় এই রকম ছাত্রী। পরবর্তীতে
নায়িকার পড়াশুনার কোন বালাই থাকবে না কাহিনিতে। পড়াশুনা করতে করতে হঠাৎ যে কোন কারণে নায়িকার বিয়ে হয়ে যাবে অপরিচিত কোন যুবকের সাথে।
বলাবাহুল্য, নায়িকার সাথে যার বিয়ে হবে সেই নায়ক। ঐ ছেলের চরিত্র যে রকমই হোক না কেন, নায়ক সেই। নায়ক স্বাভাবিকভাবেই নির্মল নিপাট ভাল ছেলে হবে। আর চরিত্রে কোন দোষ থাকলেও নায়িকা ধীরে ধীরে নায়ককে নিজের মত করে গড়ে নিবে! বাসর রাতে চুক্তি হবে “আমাদের মধ্যে কখনই স্বামী স্ত্রীর কোন সম্পর্ক হবে না যদিও সবাই জানবে আমরা স্বামী স্ত্রী”। নায়ক বেচারা এই চুক্তির কারণে কিছু করতেও পারবে না সইতে ও পারবে না। তার আপাতত আর কোন কাজ নাই।
কিছুদিন পর শুরু হবে শ্বশুর বাড়ির অত্যাচার। ননদ শাশুড়ি উভয়ই বা তাদের যে কোন একজন নায়িকার বিপক্ষে সারাদিন লেগে থাকবে। নায়িকাকে বিভিন্ন ঝামেলায় ফেলতে তারা সদা তৎপর। ঝামেলা গুলোও বিরাট আকারের ঝামেলা। ছোট আকারের কোন ঝামেলা করা যাবে না। যেমনঃ খাবারে লবণ বেশি দিয়ে নায়িকাকে নাকানি চুবানি খাওয়ানো । একদিন লবণ বেশি দিলে ঐ দিন রাতের খাবার সারতেই ৩ পর্ব যাতে চলে যায় সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
কোনদিন খাবারে লবণ কম হলে বা নায়কের পছন্দের কই মাছের ঝোলের সাথে বিরিয়ানি না থাকলে ডাইনিং টেবিলে সবার মুখের দিকে একবার করে ক্যামেরা তাক করা হবে এবং টেলিভিশন পর্দা বারবার ঝাকি খাবে বা সবার চেহারা সাদাকালো হয়ে যাবে। যে কোন সঙ্কট বোঝাতে পর্দা সাদাকালো করে দেয়া খুবই কার্যকর একটা উপায়। এইরকম চলতে থাকবে এক বছর। কোন একজনকে নায়িকাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভার নিতে হবে। নায়িকা মন দিবে শ্বশুর বাড়ির সবার মন জয় করতে। এমনকি তার ননদ বা শাশুড়ি যারা তার বিপক্ষে তাদেরও সে কিছু বলবে না। বরং তাদের মন জয় করবে সার্বক্ষণিক সেবার মাধ্যমে। তারপর একদিন শ্বশুর শাশুড়ি সবাই নায়িকার ভক্ত হয়ে যাবে। নায়িকা তার ভালমানুষি দিয়ে সবার মন জয় করবে।
একজন একজন করে সবার মন জয় করতে আরও ছয় মাস। শ্বশুর বাড়ির সবার সাথে সম্পর্ক ভালো হয়ে গেলেও বাদ থাকবে তখনো তার স্বামী। স্বামী বেচারা তখন পর্যন্ত নায়িকাকে একটা চুমু পর্যন্ত খেতে পারেনি। চুক্তির কারণে স্বামী নায়িকার কাছে আসতেও পারে না। শুধুমাত্র মাঝে মধ্যে টাই বেঁধে দেয়ার সময় বা খাবার খাওয়ার সময় নায়কের হাতের ছোঁওয়া লেগে যাবে নায়িকার হাতে। তখনই শুরু হবে “লা লা লা লা” টাইপের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। কখনো কখনো আবার নায়িকার গলার হার পরতে সমস্যা হলে তখন নায়ক এসে সাহায্য করবে। তখনও ঐ “লা লা লা লা” বাজতে থাকবে। সিরিয়ালের জন্য কয়েকটা আজেবাজে সুর আগে থেকে তৈরি রাখতে হবে। নায়ক নায়িকা কাছে এলে “লা লা আলা” আবার দুর্ঘটনা ঘটলে “ক্র ক্র ক্র” ইত্যাদি রাখতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ বুঝতে পারবে না আসলে কী হচ্ছে। তখন এই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকই মানুষকে বুঝিয়ে দিবে আসলে প্রেম ভালবাসা হচ্ছে না খারাপ কিছু হচ্ছে।
যাই হোক, একমাস পর নায়িকা আবিষ্কার করবে সে প্রেগন্যান্ট। কিভাবে সেটা হল তা আর বললাম না। পরিবারে খুশির জোয়ার। আবার নতুন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, “হু হু হু হা হা হা, লা লা লা লা”। শাশুড়ি ননদ সবাই নায়িকার পিছনে লেগে যাবে। ভারি কিছু উঠানো যাবে না, রান্নাঘরে আসতে দিবে না, সারাদিন শুইয়ে রাখার চেষ্টা করবে। নায়িকাও কম যায় না, যতটুক পারে, সে করতে থাকবে।
মনে রাখবেন, কখনোই এক চান্সে বাচ্চা হওয়া যাবে না।
বাচ্চা হয়ে গেলেই কাহিনীর মোটামুটি একটা পর্যায় শেষ। তাই যে কোন উপায়েই হোক, নায়িকার বাচ্চা হওয়া থামাতে হবে।
এজন্য প্রেগন্যান্সির ৫/৬ মাসের দিকে হঠাৎ একদিন নায়িকা দোতলার সিঁড়ি থেকে নিচতলায় পড়ে যাবে। দরকার হলে বাথরুমে বা রান্নাঘরে নায়িকাকে পড়তেই হবে।
প্রথম বাচ্চা মিসক্যারিজ হওয়ার পরে সবার মন খারাপ থাকবে। নায়িকা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বে। তখন নায়ক এসে আদর সোহাগ দিয়ে নায়িকাকে শান্ত করবে।
আদর সোহাগ দিয়ে শান্ত করার একমাস পরে দেখা যাবে নায়িকা আবার প্রেগন্যান্ট! এইবার অবশ্য সবাই অনেক সতর্ক থাকবে। ফলে ১০ মাসের মধ্যে বাচ্চা হয়ে যাবে। তবে কাহিনীর স্বার্থে এই দশ মাসকে ছোট করে আপনার ৫/৬ মাসে দেখাতে হবে। আর চাইলে আরেকবার মিসক্যারিজ করানো যেতে পারে। কাহিনী আরেকটু বাড়বে ।
১০ মাস পরে নায়িকার ফুটফুটে একটা মেয়ে হবে। মনে রাখবেন, ছেলে হলে সমস্যা। ছেলে হওয়া যাবে না, অবশ্যই মেয়ে হতে হবে। এই মেয়ে বাংলা সিনেমার মত হঠাৎ একদিন বড় হয়ে যাবে। কাহিনী মোটামুটি এখানেই শেষ। তারপর নায়িকার মেয়ে বড় হলে একই কাহিনী আবার ঘটবে। তারপর তার মেয়ের মেয়ের সাথেও (মানে নায়িকার নাতনি) একই কাহিনী ঘটবে...(এভাবে চলতে থাকবে)
ব্যাস...!!! তৈরি হয়ে গেল মজাদার হিন্দি সিরিয়াল। এবার পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে উপভোগ করুন সুস্বাদু, মজাদার হিন্দি সিরিয়াল। আর আমি এই সময়ে একটু ক্যালকুলাস করে ফেলি। সামনে ফাইনাল তো তাই।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Update

Recent Visitor