jewelheron2@gmail.com

Tuesday, January 8, 2013

বাংলাদেশের ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি যেভাবে ২১০০ সালের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যাবে

12:14 AM

Share it Please
 
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছেএর ফলে ঘটমান বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রক্রিয়ার প্রভাবে ২০২০ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে ১০ সেন্টিমিটারএকই ধারাবাহিকতায় ২০৫০ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে এখনকার চেয়ে ২৫ সেন্টিমিটার যার ফলে বাংলাদেশের ৪ শতাংশ ভূমি সমুদ্রের পানির নিচে চলে যাবে আর ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ সমুদ্রের দখলে চলে যাবেসমুদ্রপৃষ্ঠের এই স্ফীতির ফলে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূমি পানির নিচে চলে যাবেএর ফলে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা চলে যাবে সমুদ্র গর্ভেএ আশংকার কথা জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি পরিবেশ বিজ্ঞানীরা
একটা গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২১২ দশমিক পাঁচ মিলিয়নতখন জলবায়ুর ক্ষতিতে পড়বে আট দশমিক ৫০ মিলিয়ন মানুষ
তখন পাঁচ হাজার ৯০৩ বর্গকিলোমিটার ভূমি ডুবে যাবার পর দেশের অবশিষ্ট থাকবে মাত্র এক লাখ ৪১ হাজার ৬৬৭ বর্গকিলোমিটার স্থলএকবিংশ শতাব্দির শেষে পানির নিচে চলে যাবে বাংলাদেশের ২৫ হাজার ৮৭ বর্গকিলোমিটার ভূমিফলে অবশিষ্ট ভূমি থাকবে এক লাখ ২২ হাজার ৪৮৩ বর্গকিলোমিটারজনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়ে গিয়ে হবে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৭শ৩৫ জনযা সাধারণ ঘনত্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি

গত ২৬ নভেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় বিশ্বের প্রায় ১৯২টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনে শুরু হয়েছে ১৮তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনবিশ্ব কার্বন নিঃসরণ মাত্রা ১৯৯০ সালের তুলনায় দ্রুত কমিয়ে আনা, বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় থেকে দুই ডিগ্রীর মধ্যে সীমিত রাখার জন্য সিদ্ধান্ত প্রনয়ন এবং সকল দেশের একসাথে কাজ করার বিষয়টি হবে দোহা সম্মেলনের অন্যতম আলোচ্য বিষয়কিন্তু প্রশ্ন হল, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন তা কি আসলে বাস্তবায়িত হবে, দোহা সম্মেলন কি বাংলাদেশের মত জলবায়ু কবলিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর স্বার্থ সংরক্ষন করতে পারবে? কোপেনহেগেন, কানকুন, ডারবান ইত্যাদি সম্মেলনে বাংলাদেশের মত ঝুকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হলেও দেখা যায় তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নিজার্মান ওয়াচ এক জরিপে দেখায় যে, ১৯৯১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বাংলাদেশের প্রায় ২০৯ কোটি টাকা ক্ষতি হয় যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১.৫৬ শতাংশবৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে এর পরিমান আরো বাড়বে২০৫০ সালের মধ্যে ধানের উৎপাদন ১০ শতাংশ এবং গমের উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে যাবেএকদিকে কৃষি উৎপাদন হ্রাস অন্য দিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রকট রূপ দান করবে ততে সন্দেহ নেই২০১১ সালে ডারবান জলবায়ু সম্মেলন চলাকালীন এক সাংবাদিক সম্মেলনে গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০১২প্রকাশ করা হয়েছিলতাতে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশবিশ্বব্যাংকের এক তথ্যানুসারে বিশ্বে ১২টি বন্যা প্রবন দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথমউন্নত দেশ গুলোর অপারগতা ও উদাসীনতার দরুন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আজ বিশ্ব মানচিত্র থেকে বিলীন হওয়ার পথেঅথচ শিল্প উন্নত এই দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী দেশএক গবেষণায় দেখা যায় কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান শীর্ষেচীন থেকে নির্গত হয় বিশ্বের মোট কার্বন-ডাই অক্সাইডের ২৩.৫৩ শতাংশদ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তার নির্গত মোট কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমান ১৮.২৭ শতাংশতৃতীয় স্থানে অবস্থানকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে নির্গত হয় ১৩.৯৮ শতাংশএই তালিকায় চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারত, রাশিয়া, জাপান ও জার্মানিআবার ২০১০ সিডিআইএসি থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতএক্ষেত্রে চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে রাশিয়া, জাপান, জার্মানি ও ইরান এবং অষ্টম ও নবম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডাজলবায় পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় অর্থায়নের জন্য গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড গঠিত হলেও এ তহবিলে অর্থ নেইবাংলাদেশ চলমান জলবায়ু সম্মেলনে এ তহবিল বৃদ্ধির জন্য দাবী করবেকিন্তু দাতা দেশগুলো বরাবরের মতো এবারও হয়তা একই কথা বলবে, অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিবে কিন্তু তা বাস্তবায়ন করবে নাযেমন ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৩হাজার কোটি ডলার প্রদানের ঘোষনা দিয়েছিল এই দেশগুলোকিন্তু দেখা গেল এ পর্যন্ত ঘোষিত অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র ২৯০ কোটি ডলারকিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন দাবী করছে তারা এরই মধ্যে ৩হাজার ২শ কোটি ডলার দিয়েছেতাহলে এই অর্থ গেল কোথায়? এখানে জলবায়ু কবলিত দেশগুলোকে এক বড় শুভঙ্করের ফাকির মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়েছেএই দেশগুলোর সহযোগীতা না পাওয়ার আরও একটি বড় কারণ হতে পারে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা

জলবায়ু পরিবর্তন হবেই, এটা আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে নাজলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো সম্ভব না হলেও এখন ক্ষতি কমিয়ে রাখা সম্ভবআমাদের উন্নত দেশ গুলোর প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যেহেতু আমাদের মতো দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়ফলে যারা এর জন্য দায়ী তারাই উপশম করুকতারা কার্বন নিঃসরণ করবে আর আমরা অভিযোজন করে যাব, সেটা তো হতে পারে নাআমাদের অভিযোজনের ক্ষমতাও তো সীমিতআমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাববৃক্ষ রোপণ করব,নদীর বাঁধ ঠিক রাখব,কার্বন নিয়ন্ত্রনে রাখবপরিবেশ দূষণ প্রতিহত করবদুর্যোগ মোকাবেলা সংক্রান্ত একটি আইন হচ্ছে আমাদের দেশেসেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি আসবেআমরা তা মেনে চলব
 

0 comments:

Post a Comment

Twitter Update

Recent Visitor