জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ঘটমান
বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রক্রিয়ার প্রভাবে ২০২০ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে ১০
সেন্টিমিটার। একই ধারাবাহিকতায়
২০৫০ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে এখনকার চেয়ে ২৫ সেন্টিমিটার যার ফলে
বাংলাদেশের ৪ শতাংশ ভূমি সমুদ্রের পানির নিচে চলে যাবে আর ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্র
পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ সমুদ্রের দখলে চলে যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের এই
স্ফীতির ফলে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূমি পানির নিচে চলে যাবে। এর ফলে
ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা চলে যাবে সমুদ্র গর্ভে।এ আশংকার কথা
জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
একটা গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২১২ দশমিক পাঁচ
মিলিয়ন। তখন জলবায়ুর
ক্ষতিতে পড়বে আট দশমিক ৫০ মিলিয়ন মানুষ।
তখন পাঁচ হাজার ৯০৩ বর্গকিলোমিটার ভূমি ডুবে যাবার পর দেশের অবশিষ্ট থাকবে মাত্র এক লাখ ৪১ হাজার ৬৬৭ বর্গকিলোমিটার স্থল। একবিংশ শতাব্দির শেষে পানির নিচে চলে যাবে বাংলাদেশের ২৫ হাজার ৮৭ বর্গকিলোমিটার ভূমি। ফলে অবশিষ্ট ভূমি থাকবে এক লাখ ২২ হাজার ৪৮৩ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়ে গিয়ে হবে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৭শ’ ৩৫ জন। যা সাধারণ ঘনত্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
তখন পাঁচ হাজার ৯০৩ বর্গকিলোমিটার ভূমি ডুবে যাবার পর দেশের অবশিষ্ট থাকবে মাত্র এক লাখ ৪১ হাজার ৬৬৭ বর্গকিলোমিটার স্থল। একবিংশ শতাব্দির শেষে পানির নিচে চলে যাবে বাংলাদেশের ২৫ হাজার ৮৭ বর্গকিলোমিটার ভূমি। ফলে অবশিষ্ট ভূমি থাকবে এক লাখ ২২ হাজার ৪৮৩ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়ে গিয়ে হবে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৭শ’ ৩৫ জন। যা সাধারণ ঘনত্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
গত ২৬ নভেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় বিশ্বের প্রায় ১৯২টি দেশের প্রতিনিধিদের
অংশগ্রহনে শুরু হয়েছে ১৮তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। বিশ্ব কার্বন
নিঃসরণ মাত্রা ১৯৯০ সালের তুলনায় দ্রুত কমিয়ে আনা, বিশ্ব তাপমাত্রা
বৃদ্ধি দেড় থেকে দুই ডিগ্রীর মধ্যে সীমিত রাখার জন্য সিদ্ধান্ত প্রনয়ন এবং সকল
দেশের একসাথে কাজ করার বিষয়টি হবে দোহা সম্মেলনের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন হল,
যে লক্ষ্য
ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন তা কি আসলে বাস্তবায়িত হবে, দোহা সম্মেলন কি
বাংলাদেশের মত জলবায়ু কবলিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর স্বার্থ সংরক্ষন করতে পারবে?
কোপেনহেগেন,
কানকুন,
ডারবান
ইত্যাদি সম্মেলনে বাংলাদেশের মত ঝুকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন
করা হলেও দেখা যায় তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। জার্মান ওয়াচ এক
জরিপে দেখায় যে, ১৯৯১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বাংলাদেশের প্রায় ২০৯ কোটি
টাকা ক্ষতি হয় যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১.৫৬ শতাংশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা
রোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে এর পরিমান আরো বাড়বে। ২০৫০ সালের মধ্যে
ধানের উৎপাদন ১০ শতাংশ এবং গমের উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে যাবে। একদিকে কৃষি
উৎপাদন হ্রাস অন্য দিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে
প্রকট রূপ দান করবে ততে সন্দেহ নেই।
২০১১ সালে ডারবান জলবায়ু সম্মেলন চলাকালীন এক সাংবাদিক সম্মেলনে “গ্লোবাল ক্লাইমেট
রিস্ক ইনডেক্স ২০১২” প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে বলা হয় জলবায়ু
পরিবর্তনের কারনে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের এক
তথ্যানুসারে বিশ্বে ১২টি বন্যা প্রবন দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। উন্নত দেশ গুলোর
অপারগতা ও উদাসীনতার দরুন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আজ বিশ্ব মানচিত্র থেকে বিলীন
হওয়ার পথে। অথচ শিল্প উন্নত
এই দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী দেশ। এক গবেষণায় দেখা
যায় কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান শীর্ষে। চীন থেকে নির্গত
হয় বিশ্বের মোট কার্বন-ডাই অক্সাইডের ২৩.৫৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে
রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তার নির্গত মোট কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমান ১৮.২৭ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে
অবস্থানকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে নির্গত হয় ১৩.৯৮ শতাংশ। এই তালিকায় চতুর্থ,
পঞ্চম,
ষষ্ঠ ও
সপ্তম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারত, রাশিয়া, জাপান ও জার্মানি।
আবার ২০১০ সিডিআইএসি থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী কার্বন-ডাই অক্সাইড
নির্গমনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও
ভারত। এক্ষেত্রে চতুর্থ,
পঞ্চম,
ষষ্ঠ ও
সপ্তম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে রাশিয়া, জাপান, জার্মানি ও ইরান এবং অষ্টম ও নবম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে
দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডা। জলবায় পরিবর্তনের
প্রভাব মোকাবেলায় অর্থায়নের জন্য গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড গঠিত হলেও এ তহবিলে অর্থ
নেই। বাংলাদেশ চলমান
জলবায়ু সম্মেলনে এ তহবিল বৃদ্ধির জন্য দাবী করবে। কিন্তু দাতা
দেশগুলো বরাবরের মতো এবারও হয়তা একই কথা বলবে, অর্থায়নের
প্রতিশ্রুতি দিবে কিন্তু তা বাস্তবায়ন করবে না। যেমন ২০১০ সাল
থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৩হাজার কোটি ডলার প্রদানের ঘোষনা দিয়েছিল এই
দেশগুলো। কিন্তু দেখা গেল এ
পর্যন্ত ঘোষিত অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র ২৯০ কোটি ডলার। কিন্তু ইউরোপীয়
ইউনিয়ন দাবী করছে তারা এরই মধ্যে ৩হাজার ২’শ কোটি ডলার দিয়েছে।
তাহলে এই অর্থ গেল কোথায়? এখানে জলবায়ু কবলিত দেশগুলোকে এক বড় শুভঙ্করের ফাকির মধ্যে
বসিয়ে রাখা হয়েছে। এই দেশগুলোর
সহযোগীতা না পাওয়ার আরও একটি বড় কারণ হতে পারে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা।
জলবায়ু পরিবর্তন হবেই, এটা আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তন
ঠেকানো সম্ভব না হলেও এখন ক্ষতি কমিয়ে রাখা সম্ভব। আমাদের উন্নত দেশ
গুলোর প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যেহেতু আমাদের মতো দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়। ফলে যারা এর জন্য
দায়ী তারাই উপশম করুক। তারা কার্বন
নিঃসরণ করবে আর আমরা অভিযোজন করে যাব, সেটা তো হতে পারে না।
আমাদের অভিযোজনের ক্ষমতাও তো সীমিত।
আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাব। বৃক্ষ রোপণ করব,নদীর বাঁধ ঠিক
রাখব,কার্বন নিয়ন্ত্রনে রাখব।
পরিবেশ দূষণ প্রতিহত করব।
দুর্যোগ মোকাবেলা সংক্রান্ত একটি আইন হচ্ছে আমাদের দেশে। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের
বিষয়টি আসবে। আমরা তা মেনে চলব।
0 comments:
Post a Comment